Sunday, August 16, 2015

চাল কুমড়া চাষের পদ্ধতি



গ্রাম বাংলায় ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত। তবে জমিতে (মাচায়)-এর ফলন বেশি হয়। কচি কুমড়া (ঝালি) তরকারী হিসেবে এবং পরিপক্ক কুমড়া মোরব্বা ও হালুয়া তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।


পুষ্টিগুণ-   চাল কুমড়া পুষ্টিকর সবজি। চাল কুমড়াই বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
ঔষুধি গুণচাল কুমড়ার বড়ি ও মোরব্বা ফুসফুসের জন্য উপকারী। চাল কুমড়ার বীজ কৃমি নাশ করে থাকে। এবং এর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ ভাল হয়।

 জাতঃ  
হাইব্রীড চালকুমড়া হীরা ৪৫১
এ জাতের চালকুমড়া গাঢ় সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১-১.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া সারা বছর বপন করা যায়। ফসল ৫০-৫৫ দিনে সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাত, দুর পরিবহনে সুবিধাজনক। প্রতি একরে ৩০-৩৫ টন ফলন পাওয়া যায়।

 উফ্‌শী চালকুমড়া সবুজঃ
এ জাতের চালকুমড়া গাঢ় সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ২-২.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া মাঘ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বপন করা যায়। ফসল ৬০-৬৫ দিনে সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি চালকুমড়া ১০-১২ ইঞ্চি। এ জাতটি ভাইরাস, ডাউনি মিলডিউ এবং পাউডারিমিলডিউ সহনশীল। প্রতি একরে ২৫-৩০ টন ফলন পাওয়া যায়। 

চালকুমড়া ভৈরবীঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল চালকুমড়ার জাত। চালকুমড়ার রং সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১.৫ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া শীত ব্যতীত প্রায় সারা বছর চাষ করা যায়। ফসল ৪০-৪৫ দিনে আসা শুরু করে। প্রতিটি চালকুমড়া ২০-২৫ সেমিঃ লম্বা। প্রতি একরে ১০-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।

চালকুমড়া ওয়ান্ডারফুলঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল চালকুমড়ার জাত। চালকুমড়ার রং সবুজ এবং ফলের গড় ওজন ১.৫-২.০ কেজি। এ জাতের চালকুমড়া চৈত্র হতে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল ৪০-৪৫ দিনে আসা শুরু করে। প্রতিটি চালকুমড়া ২৫-৩০ সেমিঃ লম্বা। প্রতি গাছে ৮-১০ টি এবং প্রতি একরে ১৩-১৮ টন ফলন পাওয়া যায়।



চালকুমড়া সুমাইয়াঃ
এ জাতটি উচ্চ ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন, হাইব্রীড, পাকা চালকুমড়া সংরক্ষন উপযোগী এবং দুর পরিবহনে সুবিধাজনক। চালকুমড়া লম্বাটে গোলাকার এবং সবুজ রং এর। x ৪ দূরত্বে বীজ রোপন করতে হয়। রোপনের ৫০ দিন পর কচি জালি সংগ্রহ করা যায়। প্রতি একরে ১২ টন ফলন পাওয়া যায়। 

জুপিটার এফ১
এটি হাইব্রিড জাতের চালকুমড়া। এর রং গাঢ় সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ১৮-২০ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি আগষ্ট মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১৮-২০ টন।

পোলস্টার এফ১
এটি হাইব্রিড জাতের চালকুমড়া। এর রং হালকা সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-২৫ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি আগষ্ট পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১৮-২০ টন।

দূরন্তঃ
এটি উচ্চফলনশীল জাতের চালকুমড়া। এর রং সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-৩০ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১.৫ কেজি। ফেব্রুয়ারি আগষ্ট মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৫০-৫৫ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫-২ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১২-১৪ টন।

দূর্বারঃ
এটি উচ্চফলনশীল জাতের চালকুমড়া। এর রং সবুজ।চালকুমড়া লম্বায় ২০-২৫ সেমিঃ এবং ফলের ওজন ১-১.৫ কেজি। শীতকাল ব্যতীত সারা বছর চাষ করা যায়। ফসল সংগ্রহের সময় মাত্র ৪৫-৫০ দিন। বীজের হার প্রতি শতাংশে ১.৫-২ গ্রাম । একর প্রতি ফলন ১২-১৪ টন । 



 মাটিঃ  বন্যামুক্ত এবং নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটিতে এর চাষ ভাল হয়।
বীজ বপনের সময়ঃ  সারা বছর কুমড়ার চাষ করা যায়। তবে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। 

জমি / মাদা তৈরি
ঘরের চালে তুলে দিলে মাদা তৈরি করে নিতে হয়। আর জমিতে চাষ করলে কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে পরে মাদা তৈরি করতে হয়।
গর্ত তৈরিঃ ৭৫ সেঃ মিঃ (২.৫ ফুট) চওড়া ও ৬০ সেঃ মিঃ (২ ফুট) গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে।
রোপণের দূরত্বঃ  ২-২.৫০ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে।

বীজ বপনঃ  প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনতে হয়। প্রতি মাদায় দুটি সবল চারা রাখতে হবে ।
পরিচর্যাঃ  প্রথমদিকে খরার সময় মাঝে মধ্যে সেচ দিলে ভাল হয়। বর্ষার পানি নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বাওয়ার জন্য বাউনি মাচা দিতে হবে। মাঝে মাঝে কুপিয়ে মাটি আলগা করে গোড়ায় কিছু আলগা মাটি দিতে হয়। এতে আগাছাও দমন হয়। 

কৃত্রিম পরাগায়নে ফলন বৃদ্ধিঃ  চাল কুমড়া উভয় ইমনোসিয়াস প্রকৃতির সবজি অর্থাৎ দুটি সবজিই একই গাছে পৃথকভাবে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মায়। তাই উভয়ই পর-পরাগায়িত ফসল। এদের ফুল ধরার সময় হলে প্রথমে গাছে প্রচুর পরিমাণে পুরুষ ফুল আসে। পাশাপাশি স্ত্রী ফুলও জন্মায়। 
কুমড়া গাছে ফল ধরার জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক। পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু থাকে। পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে স্থানান্তরিত হতে হবে এবং ফল ধারণ করবে। 



যদি সঠিকভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে তাহলে ফুলটি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ঝরে যাবে এবং  কুমড়াটি বাড়তে থাকবে। পরাগায়ন না হলে কচি ফলটি শুকিয়ে যায়, পচে যায় এবং ঝরে পড়ে। পরাগায়ন অসম্পূর্ণ থাকলে ফলের গঠন ভালো হয় না এতে সবজির বাজারমূল্য কমে যায়, ফল ধারণক্ষমতা কমে যায় ও ফলন কম হয়। ফলের সঠিক গঠনের জন্য স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে  যথেষ্ট পরিমাণে পরাগরেণু পরতে হবে। পরাগায়নের জন্য একটি মাধ্যম বা পলিনেটর দরকার হয়।

চাল কুমড়ার পরাগায়ন প্রধানত কীটপতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছির দ্বারা সমপন্ন হয়। তবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত কীটপতঙ্গের অভাবে পরাগায়ন সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য প্রতি একর জমিতে একটি করে মৌচাক বসিয়েও পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। আথবা চাষি নিজে পরাগায়ন করে দিলে আশাতীত ফলন আশা করতে পারে । 

বাংলাদেশের বেশির ভাগ চাষি প্রান্তিক ও ছোট পর্যায়ের সে জন্য কৃত্রিম পরাগায়নই তাদের একমাত্র সমাধান। গবেষণায় দেখা গেছে, হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। লাউয়ের ফুল ঠিকমতো রোদ পেলে দুপুরের পর থেকে ফোটা শুরু হয়ে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত ফোটে। লাউয়ের কৃত্রিম পরাগায়ন ফুল ফোটার দিন বিকাল থেকে শুরু করে পর দিন সকাল পর্যন্ত করা যায়। তবে পর দিন সকালে পরাগায়ন করলে ফল কম ধরে কিন্তু ফুল ফোটার দিন দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কয়টা ফুলে পরাগায়ন করা হয় তার সব কটিতেই ফল ধরবে। মিষ্টিকুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে এবং ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভালো ফল পাওয়া যাবে। মিষ্টিকুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯টার মধ্যে সমপন্ন করতে হবে। 



সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ  ইউরিয়া ১০-১২ কেজি,  টিএসপি ৮-১০ কেজি,  মিউরেট অব পটাশ ৩-৫ কেজি,  জিপসাম কেজি,  জিংক অক্সাইড ১০০-১৫০ গ্রাম
জৈব সার যত দেওয়া যায় তত ভাল। (শতাংশ অনুযায়ী)
সার ব্যবহারের নিয়মঃ  ইউরিয়া সার ছাড়া অন্যান্য সব সার বীজ বোনার ৭-৮ দিন আগে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

কুমড়া চাষের প্রধান শত্রু "মাছি" পোকা। আবাদকৃত কুমড়ার ফুলে ও ফলে এই পোকা বসলে কুমড়া লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কুমড়া ঝড়ে পড়ে। এই পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য  সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা নিধন করা, পোকা দেখা মাত্র মেরে ফেলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা,  পোকা মারার ফাঁদ তৈরি করা এবং  বিষটোপ ব্যবহার করা।



ফসল সংগ্রহঃ  চাল কুমড়া গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। চাল কুমড়া সবজি হিসেবে খেতে হলে সবুজ হুল যুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে। মোরব্বা বা বড়ি দেওয়ার জন্য পরিপক্ক করে ১২০-১৩০ দিন পর তুলতে হবে।



Saturday, August 15, 2015

লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার চাষ ও ফলন বৃদ্ধি



লাউ বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পুষ্টিকর সবজি। লাউয়ের পাতা ও ডগা শাক হিসেবে এবং ফল ব্যঞ্জন ও ভাজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। লাউয়ের চাষ স্বল্পব্যয়ে করা যায়।

: লাউ চাষের জন্য প্রধানত উর্বর দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি উত্তম।

: রাবি লাউ-১, বারি লাউ-২, প্রলিফিক লং ও প্রলিফিক রাউন্ড। হাইব্রিড জাতগুলোর মধ্যে ডায়না, মার্টিনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।



: ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

: জমি প্রথমে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে দুই মিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ১.৫ মিটার পরপর ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া ও ৬০ সেন্টিমিটার গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। অতঃপর প্রতি মাদার ওপরের মাটির সঙ্গে ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে মাদা ভরাট করতে হবে।

: মাদায় সার প্রয়োগের ৮-১০ দিন পর বীজ বপন করতে হয়। প্রতি মাদায় ৩-৪টি বীজ ২.০-৩.০ সেন্টিমিটার গভীরে বপন করতে হবে। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর প্রতি মাদায় দুটি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়। ৪০ বর্গমিটার বা এক শতক জমিতে ২.৫০ গ্রাম (হেক্টরে ৬২৫ গ্রাম) বীজের দরকার হয়।

: ইউরিয়া ও এমওপি সার চারা গজানোর ২৫ দিন পর প্রথম, ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় এবং ৬০ দিন পর তৃতীয় কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি কিস্তিতে মাদাপ্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৪৫ গ্রাম এমওপি সার মাদার চারদিকে (গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরে) উপরি প্রয়োগ করে ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। প্রতি কিস্তি সার উপরি প্রয়োগের পর মাদায় পানি সেচ দিতে হবে।

: লাউ পানিপ্রিয় সবজি এবং গাছ যত বাড়ে ফলন তত বৃদ্ধি পায়। তাই যখনই মাটিতে রসের অভাব দেখা দেবে, তখনই বিকালে গাছের গোড়ায় পানি সেচ দেয়া উচিত।

: নিয়মিত নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। বৃষ্টিপাত বা সেচ দেয়ার পর মাটি শুকিয়ে জোএলে নিড়ানি বা ছোট কোদাল দিয়ে খুঁচিয়ে চটা ভেঙে মাটি আলগা ও ঝুরঝুরে করে দিতে হয়।


: লাউ গাছের বাড়-বাড়তি খুব বেশি হলে কিছু ডগা (৪-৫টি পাতাসহ) কচি অবস্থায় কেটে দিতে হবে। কাটা ডগা অংশ সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।


ফল সংগ্রহ : লাউয়ের বীজ বপনের ৬০-৭০ দিন পর গাছে ফুল আসে। ফুল ফোটার দিন থেকে ১০-১৫ দিনের মাধ্যে লাউ সংগ্রহের উপযোগী হয়। কচি লাউ বোঁটাসহ তোলা উচিত। ফলন : প্রতি শতকে ৮০-১২০টি লাউ পাওয়া যায়।






কৃত্রিম পরাগায়নে লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার ফলন বৃদ্ধিঃ

লাউ ও মিষ্টিকুমড়া উভয় ইমনোসিয়াস প্রকৃতির সবজি অর্থাৎ দুটি সবজিই একই গাছে পৃথকভাবে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মায়। তাই উভয়ই পর-পরাগায়িত ফসল। এদের ফুল ধরার সময় হলে প্রথমে গাছে প্রচুর পরিমাণে পুরুষ ফুল আসে। পাশাপাশি স্ত্রী ফুলও জন্মায়। 

স্ত্রী ফুল চেনার উপায় হলো ফুলের নিচে ছোট লাউ বা কুমড়া থাকে। লাউ ও কুমড়া গাছে ফল ধরার জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক। পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু থাকে। পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে স্থানান্তরিত হতে হবে এবং ফল ধারণ করবে।
যদি সঠিকভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে তাহলে ফুলটি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ঝরে যাবে এবং লাউ বা কুমড়াটি বাড়তে থাকবে। পরাগায়ন না হলে কচি ফলটি শুকিয়ে যায়, পচে যায় এবং ঝরে পড়ে। পরাগায়ন অসম্পূর্ণ থাকলে ফলের গঠন ভালো হয় না এতে সবজির বাজারমূল্য কমে যায়, ফল ধারণক্ষমতা কমে যায় ও ফলন কম হয়। ফলের সঠিক গঠনের জন্য স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে  যথেষ্ট পরিমাণে পরাগরেণু পরতে হবে। পরাগায়নের জন্য একটি মাধ্যম বা পলিনেটর দরকার হয়।
লাউ ও কুমড়ার পরাগায়ন প্রধানত কীটপতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছির দ্বারা সমপন্ন হয়। তবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত কীটপতঙ্গের অভাবে পরাগায়ন সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য প্রতি একর জমিতে একটি করে মৌচাক বসিয়েও পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। 




এর জন্য দিনের প্রথমার্ধে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। যাতে করে মৌমাছি সহজে ফুলে ফুলে বিচরণ করতে পারে। একটি ফুলের সম্পূর্ণ পরাগায়নের জন্য ৭-১০ বার মৌমাছি ওই ফুলে যাতায়াত করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ চাষি প্রান্তিক ও ছোট পর্যায়ের সে জন্য কৃত্রিম পরাগায়নই তাদের একমাত্র সমাধান। গবেষণায় দেখা গেছে, হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। লাউয়ের ফুল ঠিকমতো রোদ পেলে দুপুরের পর থেকে ফোটা শুরু হয়ে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত ফোটে। লাউয়ের কৃত্রিম পরাগায়ন ফুল ফোটার দিন বিকাল থেকে শুরু করে পর দিন সকাল পর্যন্ত করা যায়। তবে পর দিন সকালে পরাগায়ন করলে ফল কম ধরে কিন্তু ফুল ফোটার দিন দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কয়টা ফুলে পরাগায়ন করা হয় তার সব কটিতেই ফল ধরবে। মিষ্টিকুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে এবং ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভালো ফল পাওয়া যাবে। মিষ্টিকুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯টার মধ্যে সমপন্ন করতে হবে।

কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হলো ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ফুলের পাপড়ি অপসারণ করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগরেণু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে  আলতোভাবে ঘষে দেয়া হয়, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরাগরেণু পড়তে পারে। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৪-৫টি স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করা যায়। লাউয়ের ফল পরাগায়নের ১২-১৫ দিনের মধ্যে তোলার উপযোগী হয়। মিষ্টিকুমড়ার ক্ষেত্রে পরাগায়নের ২০-২৫ দিনের মধ্যে কাঁচা ফল সংগ্রহ করা যায়।
 
           
*সমস্যা: মিষ্টিকুমড়ার ফুল ও ছোট ছোট কুমড়া ঝরে যাচ্ছে ?
 *সমাধান: মাছি পোকার আক্রমণে হয়। নিমপাতার রস এবং সাবানের গুড়া মিশিয়ে স্প্রে বা সেক্র ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করশে এই পোকা মারা যায় ।