লাউ বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পুষ্টিকর সবজি।
লাউয়ের পাতা ও ডগা শাক হিসেবে এবং ফল ব্যঞ্জন ও ভাজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া
হয়। লাউয়ের চাষ স্বল্পব্যয়ে করা যায়।
: লাউ চাষের জন্য প্রধানত উর্বর দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি উত্তম।
: রাবি লাউ-১, বারি লাউ-২, প্রলিফিক লং ও প্রলিফিক রাউন্ড। হাইব্রিড জাতগুলোর মধ্যে ডায়না, মার্টিনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
: লাউ চাষের জন্য প্রধানত উর্বর দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি উত্তম।
: রাবি লাউ-১, বারি লাউ-২, প্রলিফিক লং ও প্রলিফিক রাউন্ড। হাইব্রিড জাতগুলোর মধ্যে ডায়না, মার্টিনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
: ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
: জমি প্রথমে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে দুই মিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ১.৫ মিটার পরপর ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া ও ৬০ সেন্টিমিটার গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। অতঃপর প্রতি মাদার ওপরের মাটির সঙ্গে ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে মাদা ভরাট করতে হবে।
: মাদায় সার প্রয়োগের ৮-১০ দিন পর বীজ বপন করতে হয়। প্রতি মাদায় ৩-৪টি বীজ ২.০-৩.০ সেন্টিমিটার গভীরে বপন করতে হবে। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর প্রতি মাদায় দুটি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়। ৪০ বর্গমিটার বা এক শতক জমিতে ২.৫০ গ্রাম (হেক্টরে ৬২৫ গ্রাম) বীজের দরকার হয়।
: ইউরিয়া ও এমওপি সার চারা গজানোর ২৫ দিন পর প্রথম, ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় এবং ৬০ দিন পর তৃতীয় কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি কিস্তিতে মাদাপ্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৪৫ গ্রাম এমওপি সার মাদার চারদিকে (গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরে) উপরি প্রয়োগ করে ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। প্রতি কিস্তি সার উপরি প্রয়োগের পর মাদায় পানি সেচ দিতে হবে।
: লাউ পানিপ্রিয় সবজি এবং গাছ যত বাড়ে ফলন তত বৃদ্ধি পায়। তাই যখনই মাটিতে রসের অভাব দেখা দেবে, তখনই বিকালে গাছের গোড়ায় পানি সেচ দেয়া উচিত।
: নিয়মিত নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার আগাছা
পরিষ্কার করতে হবে। বৃষ্টিপাত বা সেচ দেয়ার পর মাটি শুকিয়ে ‘জো’ এলে নিড়ানি বা
ছোট কোদাল দিয়ে খুঁচিয়ে চটা ভেঙে
মাটি আলগা ও ঝুরঝুরে করে দিতে হয়।
: লাউ গাছের বাড়-বাড়তি খুব বেশি হলে কিছু ডগা (৪-৫টি পাতাসহ) কচি অবস্থায় কেটে দিতে হবে। কাটা ডগা অংশ সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
ফল সংগ্রহ : লাউয়ের বীজ বপনের ৬০-৭০ দিন পর গাছে ফুল আসে। ফুল ফোটার দিন থেকে ১০-১৫ দিনের মাধ্যে লাউ সংগ্রহের উপযোগী হয়। কচি লাউ বোঁটাসহ তোলা উচিত। ফলন : প্রতি শতকে ৮০-১২০টি লাউ পাওয়া যায়।
: লাউ গাছের বাড়-বাড়তি খুব বেশি হলে কিছু ডগা (৪-৫টি পাতাসহ) কচি অবস্থায় কেটে দিতে হবে। কাটা ডগা অংশ সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
ফল সংগ্রহ : লাউয়ের বীজ বপনের ৬০-৭০ দিন পর গাছে ফুল আসে। ফুল ফোটার দিন থেকে ১০-১৫ দিনের মাধ্যে লাউ সংগ্রহের উপযোগী হয়। কচি লাউ বোঁটাসহ তোলা উচিত। ফলন : প্রতি শতকে ৮০-১২০টি লাউ পাওয়া যায়।
কৃত্রিম পরাগায়নে লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার ফলন বৃদ্ধিঃ
লাউ
ও মিষ্টিকুমড়া উভয় ইমনোসিয়াস প্রকৃতির সবজি অর্থাৎ দুটি সবজিই
একই গাছে পৃথকভাবে
পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মায়। তাই উভয়ই পর-পরাগায়িত ফসল। এদের ফুল ধরার
সময় হলে প্রথমে গাছে প্রচুর পরিমাণে পুরুষ ফুল আসে। পাশাপাশি স্ত্রী ফুলও
জন্মায়।
স্ত্রী ফুল চেনার উপায় হলো ফুলের নিচে ছোট লাউ বা কুমড়া থাকে। লাউ
ও কুমড়া গাছে ফল ধরার জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক।
পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু থাকে। পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে
স্থানান্তরিত হতে হবে এবং ফল ধারণ করবে।
যদি সঠিকভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে তাহলে ফুলটি একটা নির্দিষ্ট সময়
পরে ঝরে যাবে
এবং লাউ বা কুমড়াটি বাড়তে থাকবে। পরাগায়ন না হলে কচি ফলটি শুকিয়ে যায়, পচে যায় এবং ঝরে পড়ে।
পরাগায়ন অসম্পূর্ণ থাকলে ফলের গঠন ভালো হয় না এতে সবজির বাজারমূল্য কমে যায়, ফল ধারণক্ষমতা কমে যায়
ও ফলন কম হয়। ফলের সঠিক
গঠনের জন্য স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে যথেষ্ট পরিমাণে পরাগরেণু পরতে হবে। পরাগায়নের
জন্য একটি মাধ্যম বা পলিনেটর দরকার হয়।
লাউ ও কুমড়ার পরাগায়ন প্রধানত কীটপতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছির
দ্বারা সমপন্ন হয়। তবে অনেক সময়
কাঙ্ক্ষিত কীটপতঙ্গের অভাবে পরাগায়ন সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে
ফলন কমে যায়। প্রাকৃতিক
পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য প্রতি একর জমিতে একটি করে মৌচাক
বসিয়েও পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব।
এর জন্য দিনের
প্রথমার্ধে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। যাতে করে
মৌমাছি সহজে ফুলে
ফুলে বিচরণ করতে পারে। একটি ফুলের সম্পূর্ণ পরাগায়নের জন্য ৭-১০ বার মৌমাছি
ওই ফুলে যাতায়াত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ চাষি প্রান্তিক ও ছোট পর্যায়ের সে জন্য কৃত্রিম পরাগায়নই তাদের একমাত্র সমাধান। গবেষণায় দেখা গেছে, হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। লাউয়ের ফুল ঠিকমতো রোদ পেলে দুপুরের পর থেকে ফোটা শুরু হয়ে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত ফোটে। লাউয়ের কৃত্রিম পরাগায়ন ফুল ফোটার দিন বিকাল থেকে শুরু করে পর দিন সকাল পর্যন্ত করা যায়। তবে পর দিন সকালে পরাগায়ন করলে ফল কম ধরে কিন্তু ফুল ফোটার দিন দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কয়টা ফুলে পরাগায়ন করা হয় তার সব কটিতেই ফল ধরবে। মিষ্টিকুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে এবং ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভালো ফল পাওয়া যাবে। মিষ্টিকুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯টার মধ্যে সমপন্ন করতে হবে।
কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হলো ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে
ফুলের পাপড়ি অপসারণ
করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগরেণু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী
ফুলের গর্ভমুলে আলতোভাবে ঘষে দেয়া হয়, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরাগরেণু
পড়তে পারে। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৪-৫টি স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করা যায়।
লাউয়ের ফল পরাগায়নের ১২-১৫ দিনের মধ্যে তোলার উপযোগী হয়। মিষ্টিকুমড়ার ক্ষেত্রে
পরাগায়নের ২০-২৫ দিনের মধ্যে কাঁচা ফল সংগ্রহ করা যায়।
*সমস্যা: মিষ্টিকুমড়ার ফুল ও
ছোট ছোট কুমড়া ঝরে যাচ্ছে ?
*সমাধান: মাছি পোকার আক্রমণে
হয়। নিমপাতার রস এবং সাবানের গুড়া মিশিয়ে স্প্রে বা সেক্র ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার
করশে এই পোকা মারা যায় ।
অসাধারন
ReplyDelete